
শিল্পচর্চার মত সৃজনশীল কাজে উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশের পথে অভিজ্ঞতায় পুষ্ট মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার বলিষ্ঠ উন্মীলন আবশ্যক। কিন্তু কোন কারণে নিজস্ব মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের পথ রুদ্ধ হলে, শিল্পী হয়ে ওঠে আশ্রয় প্রধান। আপন শিল্পচর্চার পরিবর্তে অনুকরণপ্রিয়তাই হয়ে ওঠে শিল্পীর প্রধান উপজীব্য, শিল্পী হারান তার মৌলিকতা, শিল্পচর্চার পথ উন্মুক্ত না হয়ে যদি তা রীতিবন্ধ হয়, তার ব্যক্তিসত্তা ও শিল্পসত্তা আলাদা হয়ে পরে, আর রীতিবদ্ধতা মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার বলিষ্ঠ উন্মীলনের প্রতিবন্ধক।
শিল্পচর্চার পথে মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার বলিষ্ঠতার জন্য অভিজ্ঞতার পরিশীলন পরিমার্জন কারণকল্পে কি ধরনের অনুশীলন প্রয়োজন, তথা শিল্পচর্চার জন্য অনুশীলনের যে সব একাডেমি বা শিল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে সে সব শিল্প শিক্ষা কেন্দ্রগুলো শিল্পীর মৌলিকতা রক্ষায় কতটুকু সহায়ক হতে পেরেছে? আজ সময়ের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার কারণেই এসব নিয়ে চিন্তা ভাবনার সময হয়েছে।
মূলত ‘জড়-জীবন’, দৃশ্য’ ও ‘প্রতিকৃতি’ ইত্যাদি রীতিবন্ধ কিছু বিষয়কে হুবহু রূপ প্রদানই একাডেমিক বা প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ্যক্রমের মূল লক্ষ্য। অনেকেই এই পাঠ্যক্রমকে শিল্পের vocabulary হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন। তারা মনে করেন এই vocabulary পূর্ণভাবে অনুশীলন করা না হলে শিল্পচর্চার পথে অগ্রসর হওয়া অসম্ভব। কিন্তু Robert Atkins একাডেমিক আর্টকে চিহ্নিত করণকল্পে বলেছেন, “Art of the academy” that is art based on academic principles having now acquired a negative connotation, it is often used to describe an artist or artwork that is long on received knowledge and technical finesse but short on imagination or emotion.1 কথাগুলো পর্যালোচনা করলে দেখতে পাবো Robert Atkins তাঁর উক্তিতে বলেছেন একাডেমিক শিল্পজ্ঞান এবং মাধ্যমগত কৌশলের পথে পূর্ণতা দিলেও কল্পনা এবং অনুভূতির পথকে রুদ্ধ করে দেয়। যেহেতু কল্পনা এবং অনুভূতি মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার উপাদান সেহেতু এ কথা বলা যায় যে, মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার পূর্ণ বিকাশের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এই একাডেমিক শিল্প শিক্ষা প্রক্রিয়া।
ইতিহাসের পাতা উল্টে আমরা জানতে পারবো ষোল’শ শতাব্দীতে এই একাডেমিক শিল্প শিক্ষার সূত্রপাত ঘটে ইতালীতে, কিন্তু আজকের বিশ্বে উচ্চ মার্গের শিল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ্যক্রম অনেক পরিবর্তীত হয়ে গেছে। সময়ের সাথে শিল্পের ধারাটি যেমন বদলে যায়, শিল্পচর্চার জন্য শিল্পীর অনুশীলনের পথটিও তেমন বদলে যায়। কারণ অনুশীলনের পথটি বাছাই করার স্বাধীনতা শিল্পীর রয়েছে।
তাহলে শিল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা কোথায়? প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই আছে। সমাজ সভ্যতা এবং মানুষের চেতনা ও জীবন বিকাশের জন্য শিল্পের যেমন প্রয়োজন, শিল্পচর্চার পূর্ণতার জন্যই শিল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা তেমনি রয়েছে। তবে শিল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাদানের পদ্ধতিটির পরিবর্তন প্রয়োজন। সৃজনশীলতা বিকাশের পথে আজ উন্নত বিশ্বের প্রাতিষ্ঠানিক শিল্প শিক্ষা গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করতে পেরেছে। কিন্তু বাংলাদেশের শিল্প শিক্ষার পাঠ্যক্রমটি অপরিকল্পিত পরিকল্পনার বোঝা বয়ে অগ্রসর হচ্ছে।
ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় বাংলাদেশের শিল্প শিক্ষার পাঠ্যক্রমের সূত্রপাত ঘটে ঢাকা আর্ট কলেজে, বর্তমানে এটি চারুকলা ইনস্টিটিউট নামে পরিচিত। আজ শুধু এই প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই শিল্প চর্চিত হচ্ছে। ঢাকা আর্ট কলেজের এই পাঠ্যক্রম রচিত হয় কোলকাতা আর্ট কলেজের পাঠ্যক্রমের ছায়ে। আবার কোলকাতা আর্ট কলেজের পাঠ্যক্রমের সূচনা হয় ঔপনিবেশিক ইংরেজদের প্রতিষ্ঠিত শিল্প বিদ্যালয়গুলোর অনুসরণে।
ইংরেজরা ভারতে শিল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবর্তন করেন নিজস্ব প্রয়োজন মেটাবার জন্য কিছু কাগির শিল্পী তৈরীর লক্ষ্যে। আর তাই বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় তার ‘‘শিল্প ও শিক্ষা” প্রবন্ধে সুস্পষ্টভাবেই লিখেছেন ‘‘সিলেবাস দেখলেই বোঝা যাবে উচ্চাঙ্গের শিল্প শেখাবার জন্য শিল্পবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শিক্ষার বিষয় ও রীতি প্রবর্তনকাল ভারতীয় অবস্থা ব্যবস্থার কথা স্মরণ না রেখে তৎকালীন ইংল্যান্ডের টেকনিক্যাল স্কুলের অনুকরণের চেষ্টা শুরু হলো এই দেশে। নতুন জাতের কারিগর তৈরী করাই এই শিক্ষার লক্ষ্য ছিল।২ প্রসঙ্গক্রমে ভিক্টোরিয়ান স্কুলিং এবং আজকের বিশ্বের শিল্পচর্চার স্বরূপ সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রাবন্ধিক ফয়জুল আজিম তাঁর ‘‘বাংলাদেশে শিল্পান্দোলন ও প্রাতিষ্ঠান শিল্পশিক্ষা” প্রবন্ধে বলেছেন - ‘‘ভিক্টোরিয় শিল্পদর্শে ক্রমান্বয়ে একাডেমিক আর্টের প্রর্বতন করা হয়ছেলি। কন্তিু ইতমিধ্যে একাডমেকি আর্টের প্রক্ষোপট অনকে পরির্বতন হয়েছে। পাশ্চাত্যে যসেব দেশে একাডেমিক আর্টের উদ্ভব হয়েছিল ভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থায়, সেই সব দেশে নানা বিবর্তনের ভেতর দিয়ে প্রধানত সৃজনশীল শিল্পচর্চার লক্ষ্যে একাডেমিক আর্টে বহু পরিবর্তন ঘটিয়ে শিল্প শিক্ষাকে প্রাথমিক অবস্থা থেকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গৎ বাঁধা একাডেমিয়ানার পরিবর্তে সম্পূর্ণ মুক্তচর্চার পরিবেশ সেখানে সৃষ্টি হয়েছে”। প্রকৃতপক্ষে সময়ের সাথে আজকের বিশ্বে শিল্প পাঠদানের এই সনাতনী রীতিবন্ধ প্রক্রিয়াটি অচল। পাঠদানের পদ্ধতিতে শিক্ষার সীমা ও সম্ভাবনা কতটুকু সেদিকে আমাদের নজর রাখা উচিৎ। আজকের বিশ্বে শিল্পীর মৌলিকতা রক্ষার্থে একাডেমিগুলোতে স্টুডিও ভিত্তিক (Studio Based) পাঠ্যক্রম বহুল প্রচলিত। এই Studio Based পাঠ্যক্রমের স্বরূপ বর্ণনা করা আবশ্যক। (এখানে উল্লেখ্য যে, শিল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তাত্ত্বিক বিষয়পত্র আমার এই আলোচনায় টেনে আনছি না, সে বিষয়েও দীর্ঘ আলোচনা হওয়া প্রয়োজন)। বিভিন্ন দেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই পাঠ্যক্রমটির স্বরূপ বভিন্নি হলওে দৃষ্টিকোণেরে পরর্বিতন এসছে,
জড়-জীবন দৃশ্য ইত্যাদি রচনায়। এই পরিবর্তনের পেছনে পাঠ্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত পাঠদানের অবদানটিই বেশী। এই পাঠদানের যে চিত্র সাধারণভাবে আমরা পাই তা হলো অনুশীলনের পথে শিক্ষক শিক্ষার্থীর সহায়ক হন, কিন্তু নির্দেশ করেন না। শিক্ষক ধরিয়ে দেন শিক্ষার্থীর রচনা শৈলীর দুর্বলতা, বুঝিয়ে দেন তার করণকৌশলগত সীমাবদ্ধতা। শিক্ষার্থীর ভেতর শিল্পসত্তাটি জাগ্রত করাই শিক্ষকের লক্ষ্য। তাই শিক্ষক শিক্ষার্থীর শিল্পকর্ম বিচার করে তাকে নিজস্ব শিল্পচর্চার পথে উৎসাহিত করে তোলেন, সাহায্য করেন দক্ষতা অর্জনে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীও নিজ সৃষ্টির পেছনে প্রতিটি হেতু তথা রেখা, রং, ফর্ম ইত্যাদি ব্যবহারের কারণ শিক্ষককে জানাবার প্রশ্নে দায়বদ্ধ থাকে। এভাবেই জড়-জীবন, লাইফ ড্রইং ও দৃশ্য রচনায় শিক্ষার্থী তার আপন দৃষ্টিকোণ অর্জন করে। জড়-জীবন, দৃশ্য ইত্যাদির প্রতিবিম্ব রূপায়নই নয় বরং আপনা দৃষ্টিকোণের উন্মলনই Studio Based পাঠ্যক্রমের মূল লক্ষ্য।
Studio Based পাঠ্যক্রমের পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা আবশ্যক। পরীক্ষা ব্যবস্থা তিন ভাগে বিভক্ত, হাতে কলমে কাজের পরীক্ষা অর্থাৎ পরীক্ষার নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যে করা কাজ এবং সরার বছরের কাজের নির্দশন উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নিজ শিল্পকর্মের উপর একটি নিবন্ধ জমা দেবার মাধ্যমে ২য় পরীক্ষাটি হয়। আর ৩য় পর্বের পরীক্ষাটি হয় মৌখিক্ এই পরীক্ষায় একটি পরীক্ষা বোর্ডের সামনে নিজের শিল্পকর্ম প্রদর্শন করে রচনা শৈলীর কারণ যুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। প্রকৃতপক্ষে এই ত্রিবিধ পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর নির্মাণ দক্ষতা, কল্পনাশক্তি, চিন্তাশক্তি এবং বুদ্ধিবৃত্তির যাঁচাই করা হয়। কিন্তু আমাদের এই সনাতনী শিক্ষাপদ্ধতিতে আমাদের অভ্যাসগত দক্ষতার মূল্য বিচার করা হয়। অভ্যাসগত দক্ষতা শিল্পীর লক্ষ্য হতে পারে না উপায় বিশেষ। ‘‘অভ্যাসগত দক্ষতার পথে শিল্পীর সৃজনশীলতার উন্মেষ ও বিকাশ হবে এটা সর্বৈব বাঞ্চনীয়”।৩
স্বকীয়তা ও মৌলিকতার প্রশ্নে আপন দৃষ্টিকোণের উন্মীলন প্রয়োজন, আর এই আপন দৃষ্টিকোন উন্মীলন প্রসঙ্গে ইউরোপ থেকে ঘুরে আসা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের কথাগুলো স্মরণ করছি, তিনি বলেছিলেন-“শিল্পকলায় অনুকরণ বর্জন করার দিকে প্রথমেই চেষ্টা করতে হবে। স্ব-সৃষ্টির প্রচেষ্টাই সৃষ্টিমুলক শিল্পকলার জন্ম সম্ভব করে”। তিনি আরো বলেছিলেন- “আমরা সবাই একভাবে দেখি না, সব কিছুর মধ্যে সমভাবে থেকেও এক এক জন তার মতন করে দেখা, আর সেই দেখা একটা চরিত্র পেলেই হয়ে ওঠে বিশিষ্ট ও তাৎপর্যময়”।৪
স্বকীয়তা ও মৌলিকতার প্রশ্নে আপন দৃষ্টিকোণের উন্মীলন প্রয়োজন, আর এই আপন দৃষ্টিকোন উন্মীলন প্রসঙ্গে ইউরোপ থেকে ঘুরে আসা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের কথাগুলো স্মরণ করছি, তিনি বলেছিলেন-“শিল্পকলায় অনুকরণ বর্জন করার দিকে প্রথমেই চেষ্টা করতে হবে। স্ব-সৃষ্টির প্রচেষ্টাই সৃষ্টিমুলক শিল্পকলার জন্ম সম্ভব করে”। তিনি আরো বলেছিলেন- “আমরা সবাই একভাবে দেখি না, সব কিছুর মধ্যে সমভাবে থেকেও এক এক জন তার মতন করে দেখা, আর সেই দেখা একটা চরিত্র পেলেই হয়ে ওঠে বিশিষ্ট ও তাৎপর্যময়”।৪
এই Studio Based পাঠ্যক্রমের কিছু ঋণাত্মক দিকও আছে। এই পাঠ্যক্রমে ক্লাসের সময়সীমা নির্ধারিত থাকে না। অর্থাৎ ২৪ ঘন্টা একাডেমি খোলা থাকে ফলে শিক্ষার্থী কাজ অপেক্ষা আড্ডাপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে। আবার এই পর্যায়টিও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব, যদি পরীক্ষার সাথে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্লাস ওয়ার্কের উপস্থাপন যোগ করে দেওযা যায়। তাহলে শিক্ষার্থীর কাজের প্রতি একটি তাগিদ তৈরী হবে। প্রকৃতপক্ষে সকল পাঠদানের পদ্ধতিতে কিছু প্রতিবন্ধকতা থেকেই যায়। কিন্তু তারপরও সেই পাঠদানের পদ্ধতি সময়ের সাথে শিক্ষার সীমা ও সম্ভাবনা কতটুকু বাড়ায় তা বিচার করা উচিৎ।
এই পাঠ্যক্রম সরাসরি প্রয়োগ করলেই আমাদের সকল সমস্যা দূর হয়ে যাবে একথা বলছি না। বরং এই আধুনিক পাঠ্যক্রম আমাদের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করে Studio Based পাঠ্যক্রমের একটা ভিন্ন কাঠামো আমাদের শিল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োগ করা যেতে পারে। যা-তে শিল্পীর মৌলিকতা বিকাশে প্রাতিষ্ঠানিক শিল্প শিক্ষা প্রতিবন্ধক না হয়ে সহায়ক হয়ে ওঠে।
অতীতের সামাজিক সমস্যা ও বর্তমানের জীবনযাত্রা, বুদ্ধি বিচার ও অনুভুতির ক্ষেত্র এক নয়, চেতনায় পার্থক্য এসেছে অনেক। আর তাই আধুনিক কালের সমস্যাগুলো বিচারের ক্ষেত্রে সনাতনী মানদন্ড একেবারে অচল। তেমনি আধুনিক যুগের চাহিদা মিটাতেও অচল সনাতনী শিক্ষা পদ্ধতির। এই সনাতনী শিক্ষা পদ্ধতির প্রচলন রাখার ফলে মূল লক্ষ্য আবর্তন করছে ঠিকই কিন্তু এগুচ্ছে না। যখন আজকের বিশ্ব সময়ের সাথে তার শিক্ষা পদ্ধতি এগিয়ে নিচ্ছে, তখন আমাদের দেশের শিল্প শিক্ষার পাঠ্যক্রম ঔপনিবেশিকতার বোঝা টানছে। ফলে শিল্প হয়ে উঠছে আশ্রয়প্রিয়, শিল্পী দায়দ্ধ হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন ঘরনার কাছে। দীর্ঘদিন কঠিন অনুশীলনের রীতিবদ্ধতায় আবদ্ধ হয়ে পড়ে নিজেকে কিছুতেই মুক্ত করতে পারছে না। ফলে গড্ডালিকা প্রবাহের অনুবতর্নই তার লক্ষ্য হয়ে উঠছে। তাই শিল্পীর উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশের জন্য চাই নতুনত্ত্বের আলো বাতাস পরিপূর্ণ ঘর। অবশ্যই জানালা বন্ধ অন্ধকার শিল্পীর আশ্রয়স্থল নয়।
রবীন্দ্রনাথও উপলব্দি করেছিলেন এ সত্যটি। উনিশ’শ ছাব্বিশের মে মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘‘আর্ট এন্ড ট্রাডিশান” বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘‘শিল্প হচ্ছে সত্যের আহবানে ব্যক্তি শিল্পীর সৃজনশীল সত্তার প্রত্যুত্তর এবং শিল্পী নিজের অন্তরাত্মা ছাড়া আর কারো কাছে দায়ী নন”। সেই বক্তৃতায় তিনি সে দিনের তরুন শিল্পীদের সমস্ত অধীনতার পাশ থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীনভাবে সৃষ্টিতে তৎপর হবার আহবান জানিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন - ‘‘শিল্পের মোক্ষ্য অতীতের কোন সমাধিতে নিহিত নেই। সৃষ্টির লক্ষই হচ্ছে নিরন্তন অগ্রগামিতা”।৫
শিল্পীর ব্যক্তিসত্তার পূর্ণ বিকাশকল্পে শিল্পীর আপন শিল্প জিজ্ঞাসার অনুসন্ধানি পথটির সন্ধানকল্পে প্রথম থেকে শিল্প শৈলীর ভ্রণবীজ বপন করে দিতে হবে একাডেমিক শিল্প শিক্ষা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যা শিল্পীর পরবর্তী শিল্পচর্চা, শিল্পীর স্বাধীন আগামী শিল্প চিন্তায় তাকে উদ্ভুদ্ধ করবে, পুরনো শিল্পধারার আবর্তন প্রক্রিয়ায় আবদ্ধ করে রাখবে না। আর এভাবেই কারিগর তৈরীর শৃঙ্খল মুক্ত হয়ে শিল্পী তার সৃষ্টির মৌলিকতা নিয়ে পা বাড়াবেন নতুন সৃষ্টিকে
২। চিত্রকথা - বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়-১১০ অরূণা প্রকাশনী ১৯৮৪ ইং।
৩।চিত্রকথা - বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়-২০৭ অরূণা প্রকাশনী ১৯৮৪ ইং।
৪। দেশ (সাহিত্য সংখা)- “নিজের কিছু কথা” - বিজন চৌধুরী - পৃঃ নং-৭৪
৫। দেশ (সাহিত্য সংখা)- সন্পাদকীয় - ১৩৯৯বাং, আনন্দ বাজার পত্রিকা লিঃ। কোলকাতা
গ্রন্থপঞ্জিঃ
১। Art Speak- Robert, Atkins - Page No.-37, Abbeville
Press Publishers. New York.
২। চিত্রকথা - বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়-১১০ অরূণা প্রকাশনী ১৯৮৪ ইং।
৩।চিত্রকথা - বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়-২০৭ অরূণা প্রকাশনী ১৯৮৪ ইং।
৪। দেশ (সাহিত্য সংখা)- “নিজের কিছু কথা” - বিজন চৌধুরী - পৃঃ নং-৭৪
৫। দেশ (সাহিত্য সংখা)- সন্পাদকীয় - ১৩৯৯বাং, আনন্দ বাজার পত্রিকা লিঃ। কোলকাতা
প্রথম প্রকাশনা: নৈ (শিল্পকলা বিষয়ক ত্রৈমাসিক)। মার্চ ২০০১
0 comments:
Post a Comment