![]() |
Dilara Begum Jolly-Before-the-end-of-time-4 |
বাংলাদেশে
শিল্পচর্চার পঞ্চাশ বছর অতিক্রান্ত
হলো। বিশ্বশিল্পের
ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে এ সময়টা খুব
বেশি কিছু নয়।
তাছাড়া দেশের বৃহত্তর জনসাধারণের
কাছেও এর অবয়ব এখনো
তেমন স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি। নিরক্ষর
জনগোষ্ঠীর কাছেই শুধু নয়,
শিক্ষতজনেরাও চারুশিল্পচর্চা সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা
রাখেন না। তবু
দেশে শিল্পচর্চার পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর
অনেক শিক্ষার্থী এসে হাজির হন
শিল্পচর্চার আকাঙ্খা নিয়ে। পেশাজীবনের
অনিশ্চয়তার কথা জেনেও তাঁরা
এই পথ বেছে নেন।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তরণ শিক্ষার্থীকে উদ্ভাবনী ক্ষমতায় উদ্দীপ্ত করে নিশ্চয়ই। কিন্ত্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়, এদেশে নিজস্ব শিল্প নির্মাণের ভাষা সন্ধানে প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পশিক্ষা যতোটা না সহায়তা দেয়, তার চেয়ে সীমাবদ্ধ করে ফেলে অনেক বেশি । দীর্ঘ ঔপনিবেশিক মানসিকতায় গড়ে ওঠা আমাদের শিল্পশিক্ষার কাঠামো অতিসযত্নে শিক্ষার্থীর রুচির। পথ সীমিত পরিধিতে বেঁধে ফেলে। তার (শিক্ষার্থীর) তখন যাওয়ার জায়গা থাকে দুটিই: হয় অগ্রজদের গৎবাঁধা অনুকরণে নয়তো বোধহীন চাকচিক্যের দিকে। আধুনিক হওয়ার জন্য শিল্পী ঐতিয্যের উত্তরাধিকারকে অস্বীকার করে বসেন। এ জাতীয় বিভ্রমের যথেষ্ট দৃষ্টান্ত। আমরা লক্ষ্য করেছি আমাদের অর্ধশতাব্দীর শিল্প ইতিহাসে।
নব্বইয়ের দশকে বিচ্ছিন্নভাবে হলেও শিল্পের
মুক্তির সূত্রপাত ঘটতে শুরু করেছে। এখন শিল্পী
কখনো আশ্রয় নিচ্ছেন স্থাপনাশিল্পে,
কখনো বস্তুসমন্বয় কিংবা ক্রীড়াত্মক শিল্পে। এসব
নতুন সম্ভাবনা উন্মোচনকে কোনভাবেই খাটো করে দেখা
যায় না। তবে
আমাদের অতীত ঐতিহ্যের শেকড়ে
সামাজিক আচার হিসেবে দীর্ঘদিন
এসব শিল্পের যে অবস্থান সেই
উত্তরাধিকারকে অস্বীকার করে এ পথেও
মুক্তি আসবে না।
উত্তরাধিকার অস্বীকৃত হলে এসব নতুন
চিন্তার সম্ভাবনা বিচ্ছিন্ন প্রয়াস হিসেবে ব্রাত্য
বা প্রান্তিক ধারা হিসেবে ঠাঁই পাবে মাত্র।
সময়ের
এই দাবি পূরনণের মধ্য
দিযে তরুণ প্রজন্ম জন্ম
দিতে পারে গৌরবোজ্জ্বল ভবিষ্যতের। অবশ্য
এই পথে চাকচিক্য তাকে
হাতছানি দেবে। প্রতিষ্ঠিতজনেরা
যখন তাদের জন্য গ্রহণযোগ্যতার
সেতু নির্মাণ করবে তখন নিজের
অজ্ঞাতে তারাও হয়ে পড়তে
পারেন দিকভ্রষ্ট। নতুন
শিল্পীকে এ থেকে সাবধান
থাকতে হবে।
প্রথম প্রকাশনা: প্রথম আলো। ৫ই ফেব্রুয়ারী ১৯৯৯
good